ঈসা মসীহ' আল্লাহর মনোনীত বিশ্বমানবের একমাত্র নাজাত্দাতা

ঈসা মসীহ বলছেন; 'হে পরিশ্রান্ত ভারাক্রান্ত লোক সকল, তোমরা আমার কাছে আইস, আমিই তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছে থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও নম্র। এতে তোমরা দিলে বিশ্রাম পাবে, কারণ আমার জোয়াল বয়ে নেওয়া সহজ, সরল ও আমার বোঝা হালকা’। ইঞ্জীল---মথি ১১:২৮ আয়াত।

পানি ও পাক-রূহ থেকে জন্ম না হলে কেউই আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারে না। মাবুদের পাক-রূহ/রূহুল কুদ্দস মরিয়মের গর্ভে এবং একটি পবিত্র সন্তান জন্ম নিলেন; তাঁর নাম "ঈসা মসীহ", তিনি আসলেন; যাতে তাঁর দ্বারা মানুষ নাজাত পায়। পাক-কিতাবে এইভাবেই বর্ণিত আছে: যে কেউ তাঁর উপর ঈমান আনে সে আখেরী জীবন পায়। 'ঈসা' বলছেন; “আমিই পথ, সত্য ও জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না এলে কেউই বেহেস্তে ঢুকতে পারে না”। ইঞ্জীল---ইউহোন্না ৩:৫,১৫ ও ১৪:৬ আয়াত।

কোরআনেও ঈসাকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন এবং এইভাবে বর্ণিত আছে : 'ঈসা' রুহুল্লাহ, আল্লাহর রুহ/রুহুল কুদ্দস/পাক রূহ বা পবিত্র আত্মা। 'ঈসা' আল্লাহর কালাম বা বাণী। 'ঈসা' আল্লাহর পক্ষ হইতে বিশ্বমানবের জন্য এক বিশেষ অনুগ্রহ ও নিদর্শন। 'ঈসা' আল্লাহর নূর/আলো ও আদেশ। 'ঈসার' পথই সরল পথ বা সিরাতুল মুস্তাকিম। স্পষ্ট প্রমান বা দলিল. 'ঈসার' অনুসারীগণ কিয়ামত পর্যন্ত কাফেরদের উপর বিজয়ী। ইহা এক স্থিরকৃত ব্যাপার (পূর্ব নির্ধারিত বা পরিকল্পিত), তাঁর কিতাবে আছে পথের নির্দেশ ও আলো।... সুরা বাকারা (২):৮৭,২৫৩, আল-ইমরান(৩):৪৫-৪৬,৫৫, নিসা(৪):১৭১, মায়েদা(৫):৪৪,৪৬,১১০,মরিয়ম(১৯):১৭,২১,৩৬,আম্বিয়া(২১):৯১,তাহরীম(৬৬):১২,যুখরুফ(৪৩):৫৭-৬১,বাকারা(২):৪৭,১২২ আয়াত। এই-ই মরিয়ম ত্বনয় 'ঈসা' আমি বলিলাম সত্য কথা, যে বিষয়ে তোমরা বিতর্ক কর। মরিয়ম(১৯):৩৪

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ভ্রান্ত ধারণা ও মিথ্যা অজুহাতে তামাম দুনিয়ার মুসলিম উম্মাহকে পাক কালাম (তৌরাত, জবুর ও ইঞ্জীল) পাঠ হইতে বিরত রেখেছে। কোরআন মুহাম্মদ স: কে বলছেন; কোরানে যদি তুমি সন্দেহে থাক, তবে পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর। সুরা ইউনুস(১০):৯৪ আয়াত। আরো বর্ণিত আছে তৌরাত,ইঞ্জীল ও যাহা তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের প্রতি অবর্তীর্ণ হইয়াছে তোমরা তাহা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোনো ভিত্তিই নাই। সুরা মায়েদা(৫):৬৮ ও তৌরাত ও ইঞ্জীলে আছে পথের নির্দেশ ও আলো। মায়েদা(৫):৪৪,৪৬ এবং এই কিতাবীরা অবশ্যই বহুসংখ্যক বেহস্তে যাবে: বাকারা(২):৬২, মায়েদা(৫):৬৯ ও ওয়াকিয়া(৫৬):১৩

বস্তুত: আমরা সত্যকে পাশ কাটিয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ হইতে নিজেদের বঞ্চিত করছি। 'ঈসা মসীহ' আল্লাহর দেওয়া নাম ! এই নামের আছে অনেক তাত্পর্য ও বরকত। 'ঈসা' অর্থ নাজাত্দাতা আর 'মসীহ' অর্থ আল্লাহর মনোনীত বা অভিষিক্ত। জীবন-চরিত্রে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিস্পাপ, পুত: ও পবিত্র , গুনাহ বা শয়তান তাঁকে স্পর্শ ও করে নাই।

গুনাহ হইতে মুক্তির উপায় হিসাবে পাক-কিতাবে ছয়টা বিশেষ কোরবানীর ঘটনা উল্লেখ আছে ১) আদম ও হওয়া অবাধ্য হওয়ার পর তাদের লজ্জা ডাকার জন্য মাবুদ নিজেই পশু কোরবানী দিলেন তার চামড়া দিয়ে উভয়ের লজ্জা ডেকে দেন (অর্থাত গুনাহ ক্ষমা করলেন)… তৌরাত পয়দায়েশ ৩:২১ আয়াত। ২) হাবিল তার পালের উত্তম মেষ কোরবানী দিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আর কাবিল তার ক্ষেতের ফসলের অংশ উত্সর্গ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ।কিন্তু আল্লাহ হাবিলের (রক্ত) কোরবানী কবুল করলো। তৌরাত পয়দায়েশ ৪:৩-৫ আয়াত। ৩) নূহ আ: ৪০ দিন/রাত মহা প্লাবনের পর ভূমিতে পা রেখেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কোরবানী দিলেন। তৌরাত পয়দায়েশ ৮:২০-২১ আয়াত। ৪) ইব্রাহিম আ: আল্লাহে নির্দেশে, বিশ্বাসে তার প্রিয় পুত্র ইসহাক কে কোরবানী দিতে নিয়ে গেলেন, কিন্তু মাবুদ, তার পরিকল্পনা অনুসারে একটি মেষ কোরবানীর মধ্য দিয়ে ইসহাক-কে মুক্ত করলেন।… তৌরাত পয়দায়েশ ২২ পারা ও সুরা আস-সাফ্ফাত(৩৭):১০০-১১২ আয়াত। ৫) ফেরাওনের কাছ থেকে বনী-ইসরায়লীযদের দ্বাসত্ব হইতে মুক্ত করার জন্য মাবুদ মুসাকে প্রেরণ করলেন, ফেরাওন অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে মাবুদ মৃত্যু দূতকে পাঠালেন যাতে প্রথম জাত পুত্র সন্তান মারা যাবে এমনকি পশু-পাখিরও; মুসা আল্লাহর নির্দেশে বণী-ইসরাইলদের প্রত্যেক পরিবার একটি করে বাচ্চা ভেড়া কোরবানী করে এবং তার রক্তের নিশানা দরজার কপালিতে লাগিয়ে দিতে বললেন। সেই রাতে বনি-ইসরাইল রক্ষা পেল।ফেরাওনের রাজ্যে প্রত্যেক গৃহে আঘাত করলো। তৌরাত হিজরত ১২:২১-২২ আয়াত। ৬)আল্লাহর মহা পরিকল্পনা অনুসারে ঈসা মসীহ নিজে সম্পূর্ণ নিস্পাপ ও পবিত্র হয়েও, সমস্থ মানুষের গুনাহের কাফফারা স্বরূপ ক্রুশে জীবন দিলেন, তাঁর এই মহা মূল্য পবিত্র রক্তের বিনিময়ে মানুষ গুনাহ হইতে নাজাত পায়। তিনি কবরস্ত হইলেন, তৃত্বীয় দ্বিবসে তিনি আবার স্ব-মহিমায় পুনরুত্থিত হইলেন। যতজন আল্লাহর এই মহা পরিকল্পনায় ঈমান আনে প্রত্যেকেই ঈসা মসীহের মধ্য দিয়ে ধার্মিক বলে গনীত হলেন ও অনুগ্রহে নাজাত লাভ করেন।

ঈসার ক্রুশে মৃত্যুর ও পুনরুত্থানের বিষয়ে কোরআনে ৩ টা আয়াতেও স্পষ্টই বর্ণিত আছে-- সুরা আল-ইমরান(৩):৫৫ ও মরিয়ম(১৯):১৫,৩৩ আয়াত ৩:৫৫ আয়াতে আরবী দুটি শব্দের অর্থ ভালোভাবে জেনে পড়ুন (مُتَوَفِّيكَ --মৃত্যু বরণ করা ও وَمُطَهِّرُكَ ---পুনরুত্থিত হওয়া বা পুনরায় জীবিত হওয়া )

বস্তুত আমরা সবাই প্রাণ-পন দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করছি। কোরবানীর রীতি ও তাত্পর্য অনুযায়ী আমাদের গুনাহের কাফফারা সরূপ উত্তম পশু কোরবানী দেই। কিন্তু গুনাহের পরিমান দিন দিন বাড়ছে, আদমের একটিবার অবাধ্যতার কারণে আল্লাহ আদমকে বহিস্কার করলেন। সবশেষে মাবুদ আদম সন্তানদের সাথে সম্পর্ক পু-স্থাপন করতে পাক-রূহের কুদরতে ঈসা মসীহকে দুনিয়ায় পাঠালেন,সম্পূর্ণ নির্দোষ হয়েও মানুষের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে হত হলেন, কবরে গেলেন আর তৃত্বীয় দিবসে তিনি পুনরুত্থ্লিত হলেন। মানুষের নাজাতের জন্যই আল্লাহর এক মহা অনুগ্রহ দান। গুনাহ স্বীকার করে ও তওবা করে ক্ষমা চেয়ে, পাক-রূহের কাছে সমর্পণ ও ঈসা মসীহকে আল্লাহর মনোনীত একমাত্র নাজাত্দাতা কবুল করেই পরিপূর্ণ ঈমানের মাধমেই মানবের মুক্তি বা পরিত্রান সাধিত হয়! ঈসা বলছেন: আমি গিয়ে জায়গা ঠিক করে আবার আসব, আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব; যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার। ইউহোন্না(১৪):৩ আয়াত।

বেহেস্তে দুনিয়াতে ও দুনিয়ার গভীরে যারাই আছে, প্রত্যেক জাতির লোকই ঈসার সাক্ষাতে জানু পাতবে এবং আল্লাহর গৌরব করবে। আর ঈসা বলছেন; " দেখো, আমি শিগ্রই আসছি এবং প্রত্যেককে তার কাজ অনুসারে দেবার পুরস্কার আমার সংগেই আছে। আমিই আলফা ও ওমিগা (আদি ও অন্ত), প্রথম ও শেষ, শুরু ও সমাপ্তি।...ইঞ্জীল- রোমিও ১৪:১১, ফিলিপীয় ২:১০ ও প্রকাশিত কালাম ২২:১২-১৩ আয়াত। দুনিয়াতে নুর এসেছে আর যে কেউই আল্লাহর এই কালাম শুনে নূরকে ভালবাসে ও ঈমান আনে প্রত্যেকের নাম জীবন পুস্তকে লেখা হয়ে যায় আর পবিত্র নগরীর অধিকার লাভ করে। আসুন আমরা মসীহকে আরো ভালো করে জানি ও আল্লাহ পাকের পাক-রূহকে আমাদের দিলে আহ্বান করি যেন মৃত্যুর পূর্বেই আমরা প্রত্যেকেই নাজাত নিশ্চিত করে ইহকাল ত্যাগ করতে পারি। সবাইকে মাবুদ তাঁর এই মহা পরিকল্পনা বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Previous
Previous

ঈসা আল- মসীহের জীবন ও শিক্ষা